• ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকার মালিক বরিশালের সাবেক মৎস্য কর্মকর্তা বিমল

দখিনের বার্তা
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০২:০২ পূর্বাহ্ণ
অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকার মালিক বরিশালের সাবেক মৎস্য কর্মকর্তা বিমল
সংবাদটি শেয়ার করুন....

 

বরিশালের বিতর্কিত মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাসকে অবশেষে শাস্তিমূলক বদলি দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয় এই শহরে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ মাছ চোরাকারবারিদের সহায়তা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এবং দুর্নীতির এই অর্থে নিজের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে ও রাজধানী ঢাকায় গাড়ি-বাড়ি করাসহ বরিশালে অবৈধ পন্থায় কোটি

স্বর্ণমূল্যের ভূমি ক্রয় করেছেন। বরিশাল মৎস্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের এই কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাকে নওগাঁ জেলা কার্যালয়ে বদলি দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত বিমল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে কিছুদিন পূর্বে প্রাণিসম্পদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই অভিযোগ তদন্ত-পরবর্তী মৎস্য কর্মকর্তার বদলির মধ্য দিয়ে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন সূত্র এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিমল চন্দ্র দাস ২০১৩ সালে বরিশাল জেলা মৎস্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা (ইলিশ) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বহুমুখী অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময়ে সরকার নিষিদ্ধ মাছ শিকারে অসাধু সিন্ডিকেটকে গোপনে সহায়তা দেওয়ার বিপরীতে তাদের কাছ থেকে মাসিক হারে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও আছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সূত্র জানিয়েছে, বিমল চন্দ্র দাসের এই লাগামহীন দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বরিশাল মৎস্য কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী তার রোষানলে পড়ছিলেন। শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি প্রতিবাদকারীদের শায়েস্তা করেছেন বলেও শোনা গেছে। ফলে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে আবেদনও রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিমল চন্দ্র এতটাই ক্ষমতাধর ছিলেন যে তার লাগাম টানা সম্ভবপর হচ্ছিল না। কিন্তু কিছুটা বিলম্বিত হলেও বিমল বাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো এবং তাকে শাস্তিমূলকভাবে বরিশাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বিমল বাবুর এই শাস্তিমূলক বদলিতে বরিশাল জেলা মৎস্য কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মৎস্য ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবিশেষেরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এবং আগামীতে যেন বিমল চন্দ্রের ন্যায় মৎস্য কর্মকর্তা তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে তদারকি করার

আহ্বান জানানো হয়েছে। মৎস্য দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বিমল চন্দ্র দাস বরিশালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় এক যুগের অধিক সময় দায়িত্ব পালন করেছেন।

এবং তার অনৈতিক বা নীতিবিবর্জিত কাজের কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের বদলি করানোসহ নানা হয়রানির ওপর রাখতেন। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের পাঁচ বছর তাকে আর রহিত করে কে? বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিনিই যেন হয়ে উঠেছিলেন একজন অধিকর্তা। তার এই দাপটের কাছে খোদ জেলা কর্মকর্তারাও তটস্থ থাকতেন, ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখাতেন না।

অভিন্ন তথ্য দিয়ে সূত্র বলছে, সরকারি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস ঢাকা, বরিশাল এবং নিজ জেলা ময়মনসিংহ শহরে অবৈধ অর্থে যে সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন, তা আলেচনায় আসতেই শুরু তোলপাড়। রাজধানী ফয়ট ক্রয়ের পাশাপাশি ময়মনসিংহে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি এবং বরিশালে কাশিপুরে মহাসড়কের পাশে কিনেছেন কোটি টাকা টাকা মূল্যের মূতে ভূসম্পত্তি। এ ছাড়া স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাংকে অর্থ রাখাসহ তাদের নামের কিনেছেন জমি, করেছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যা শুনে খোদ কর্মকর্তাদের চক্ষু রীতিমতো ‘চড়কগাছ’। হয়

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বিমলের দুই দিন আগে আস্য বদলি আদেশ নিয়ে জেলা মৎস্য কার্যালয়ে অপরাপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের বৃত্তির আবহ বইলেও যাদের কাছে তিনি সোনার ডিম দেওয়া হাঁস ছিলেন, তারা আপাতত অস্বস্থিতে রয়েছেন। দপ্তরটিতে এমনও কানাঘুষা চলছে, যে দুর্নীতিবা ওনাজ বিমদের পরে হয়তো তার সাগরেদদের ওপরও হয়তো শান্তির খড়গ আসতে চলছে।

তবে আলোচিত মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাসকে শাস্তিমূলক বদলি করার ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত তদন্ত করেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো কিনা সে সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। তার ভাষায়- বিমল চন্দ্রকে নওগা বদলি করা হয়েছে, এর বাইরে তিনি বেশি কিছু বলতেও সম্মত নন।

শীর্ষ কর্মকর্তা তার অধীনন্তের পক্ষে সাফাই গাইলেও বরিশালে মৎস্য ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, বিলম চন্দ্র যে তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন করেছেন তার সপক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এবং বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা পেশায় জেলে স্বৈরাচার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন। সেই অভিযোগে অন্তত ১৫/২০ ব্যক্তির কাছে ঘুষ চাওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা প্রমাণসহ উল্লিখিত আছে। মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারীদের মধ্যে অন্যতম বিমল বাবুর দুর্নীতি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ এমন সময় অভিযান চালিয়ে জব্দ করা মাছ নিয়েও নয়ছয় করেছেন। অর্থের বিনিময়ে জব্দ মাছসহ জেলেদের ছেড়ে দেওয়া এবং কখনো কখনো সেই মাছ ফ্রাই করে পত্রিকা অফিসে গুটিকয়েক সাংবাদিককে নিয়ে তাকে খেতেও দেখা গেছে, যা নিয়ে বরিশালে তুমুল সমালোচনা হলেও অমতাধর বিমলকে তৎসময়ে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। বরং আ.লীগের পুরো শাসনামল তাকে যা ইচ্ছ তাই করে বেড়াতে দেখা যায়।

অভিযোগ আছে, এই টুলুর রেগুগোনার গাড়ি রাস্তায় কোথাও আটক হলে তিনি ভূমিকা রেখে আগে নিজের জিম্মায় নিয়ে যেতেন এবং প এং পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি শান্ত হলে কৌশলে তা আবার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হতো। এ ছাড়া ভোলা-পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে আসা অবৈধ মাছের পরিবহন ধরতে বিমল বাবুর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড চোখে হ পড়েনি। যা যদি কর্মরত থাকাকালীন ২-৪টি গাড়ি অবৈধ মাছসহ ধরা পড়লেও তা দিয়ে ন্যয়ছয় করার অভিযোগ রয়েছে। এমন একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বদলি বরিশালের মৎস্য খাতসংশ্লিষ্টদের স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের দের সুশ্চিন্তামুক্ত স করলেও আগামীর আগামীর ভাবনায় অনেকে শঙ্কিত রয়েছেন। তাদের দাবি, বিমল বাবু যা করেছেন, তা হলো শকুনের কাছে মুরগি বর্গী দেওয়ার মতো। এই চরিত্রের কর্মকর্তাদের যাতে আগামীতে গুরুদায়িত্ব না দেওয়া হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবার নজর রাখতে হবে। মহাদুর্নীতিগ্রস্ত মৎস্য কর্মকর্তা বিমল বাবু এরপরেও দাবি করেছেন, তাকে কোনো অভিযোগে শাস্তিস্বরূপ বদলি দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক নিয়মেই তাকে নওগাঁতে পাঠিয়েছেন। এবং তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে আত্মপক্ষ সমর্থনে বলছেন, বরিশালের কাশিপুরে বৈধ অর্থে ৮ শতক ভূমি ক্রয় করেছেন। এরপর বলেন, বিদায়বেলা এগুলো নিয়ে নাড়ানাড়ির কী দরকার, সবাই তো একসাথেই থেকেছি। একসাথে বলতে কী বোঝাতে চান-এমন প্রশ্নে তালগোল পাকিয়ে ফেলে এই কর্মকর্তা ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন