খোকন আহমেদ হীরা ::
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেইসাথে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দেশবাসীকে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার কথা বলছে। অপরদিকে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
যদিও গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই রাজনীতির মাঠে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ আগ্রহ রয়েছে। তবে গত কয়েকমাস ধরে সংসদীয় এলাকায় নির্বাচনী হাওয়া অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণা বেড়েছে সংসদীয় এলাকাগুলোতে। তাই পুরোদমে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে বরিশাল জেলার ছয়টি নির্বাচনী আসনে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হাত ছাড়া হওয়া বরিশালের হারানো দুর্গ ফিরে পেতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা যখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন, ঠিক সেই সময় ছয়টি আসনেই ভাগ বসাতে গত প্রায় ছয় মাস পূর্বে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।
এরইমধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ থেকে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি ওঠায় নির্বাচনের সমীকরণ কিছুটা গরমিল হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীদের সাথে অন্যসব দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে হচ্ছেন তা এখনও শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলে আসছেন তারা ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের হাতে এবার ধানের শীষ তুলে দিবেন। সেক্ষেত্রে অতীতে বিগত ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে বিএনপির চরম দুর্দিনে নেতাকর্মীদের নিয়ে যারা রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদের মূল্যায়ন করা না হলে দেখা দিতে পারে বিপত্তি।
কারণ ইতোমধ্যে ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। শেষপর্যন্ত সমঝোতা হলে পাল্টে যেতে পারে নির্বাচনী সকল হিসেব নিকেশ। যে কারণে বিএনপির হারানো মসনদ ফিরে পেতে হলে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী ছাড়া বিকল্প নেই।
সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, বরিশালের ছয়টি আসনেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মূল লড়াইটা হবে বিএনপির প্রার্থীদের সাথে ইসলামীক দলের প্রার্থীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নির্বাচনী মাঠে তৎপর হয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য ও জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থীরা। তবে শেষপর্যন্ত ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে প্রার্থী মনোনয়ন কিছুটা উলোট পালট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া একটি আসনে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও ইসলামী আন্দোলনের সাথেও হতে পারে তীব্র প্রতিবন্ধিতা। এখনো সব এলাকায় কমিটি দিতে পারেনি তরুণ শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারপরেও ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের অনুসারীরা। গণঅধিকার ফোরাম থেকেও প্রার্থী দেওয়া ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন দলটির স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দরা।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) :
দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটির মধ্যে শুধু গৌরনদী উপজেলায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন তিনজন নেতা। পাশাপাশি এ আসনের আগৈলঝাড়া উপজেলায় রয়েছেন মাত্র একজন সম্ভাব্য প্রার্থী। মোট চারজন প্রার্থী দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
গৌরনদী উপজেলার প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-এ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
আগৈলঝাড়া উপজেলার একমাত্র প্রার্থী বিগত ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে বিএনপির দুর্দিনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিকবার হামলা, মামলা ও কারাভোগ করা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান।
সূত্রমতে, বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে বরিশাল-১ আসনের আগৈলঝাড়া উপজেলায়। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে এ আসনের সবদলের প্রার্থীদের কাছে তাই আগৈলঝাড়া উপজেলার ভোটাররাই হচ্ছেন বড় ফ্যাক্ট। যে কারণে ত্রয়োদশ নির্বাচনে আগৈলঝাড়া উপজেলার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ইউনিট থেকে শুরু করে সবধর্মের সাধারণ জনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহানকে সমর্থন দিয়েছেন।
এর বাহিরে বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে বিএনপির চরম দুর্দিনে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করায় সেখানেও (গৌরনদী) রয়েছে তার বিশাল একটি ভোট ব্যাংক। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান বরিশাল-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ওইসময় এ আসনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা এবং নিজ দলের নেতার দায়ের করা মামলার কারণে মাত্র সাতদিন নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ করে তিনি (সোবহান) ৭০ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়েছিলেন।
বিএনপির মনোয়ন প্রত্যাশী জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগে সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে এতোদিন এলাকায় থাকতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পাশে দাঁড়িয়েছি। দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী।
ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান বলেন, বিগত ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে এবং তার পরবর্তী সময়ে বিএনপির চরম দুর্দিনে শেখ হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দুই উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলাম। আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। ছাত্রজীবনে খুব কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেখেছি। তার আদর্শকে ভালোবেসে সরকারি চাকরি ছেড়ে টানা ৪০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছি। কোন কিছু নিতে নয়; বরং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একজন সৈনিক হিসেবে দল ও দেশের জন্য কিছু দিতে মাঠে রয়েছি। শতভাগ বিশ্বাস করছি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমার ত্যাগের মূল্যায়ন করবেন।
বিএনপির চার নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় এ আসনে প্রায় ছয় মাস পূর্বে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম খান দলের মনোনীত প্রার্থী হওয়ায় নিয়মিত তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণ যেভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাকে সমর্থন করছে, তাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে আমার বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
এ আসনে এখন পর্যন্ত এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য কোনো দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা দেখা যায়নি।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) :
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও উজিরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস শরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, সদস্য দুলাল হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা কর্নেল (অব.) আনোয়ার হোসেন, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক লায়ন আক্তার সেন্টু এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।
অপরদিকে জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাস্টার আবদুল মান্নানকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিচুজ্জামান আনিস। তবে এখনও এনসিপি কিংবা ইসলামী আন্দোলনের কোনো নেতাকর্মীকে নির্বাচনী মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) :
এখানে ব্যাপক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থীদের। এবারও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তাদের সাথে মুলাদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবদুস সত্তার খান এবং ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বরিশাল মহানগর শাখার আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। এছাড়া এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রার্থী হচ্ছেন।
তবে ইসলামী দলগুলোর সাথে সমঝোতা হলে প্রার্থীর হিসেব-নিকেশ পাল্টে যাবে। এ আসনে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যকোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের তৎপরতা এখনও দেখা যায়নি।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সুখে-দুঃখে জনগণের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই নির্বাচন করব।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, দলের দুর্দিনে হামলা-মামলার শিকার হওয়া নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার পক্ষে কাজ করছেন। মনোনয়নের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, জামায়াতে ইসলাম নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই তিনি বাবুগঞ্জের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মন জয় করেছেন। মতবিনিময় করতে গিয়ে পাচ্ছেন অভূতপূর্ব সাড়া।
এবি পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বাবুগঞ্জসহ বরিশালের উন্নয়নে আমি কাজ করছি। মানুষ এখন আর চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, দখলদার ও লুটপাটকারীদের পছন্দ করে না। তাই আমি জনগণের রায় পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) :
সংসদীয় আসনটি বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি ছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হারানো সেই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মাঠে নেমেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, জেলা উত্তর বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট এম হেলাল উদ্দীন, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল খালেক হাওলাদার, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ।
অপরদিকে বেশ আগেই মনোনয়ন পাওয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবদুল জব্বার আছেন ফুরফুরে মেজাজে। তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বরিশাল-৫ (সিটি ও সদর) :
বরিশালের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু সদরের আসন। এখানকার রাজনৈতিক মাঠ বরাবরই বিএনপির নিয়ন্ত্রণে ছিল। দীর্ঘদিন পর এবার ভোটের মাধ্যমে নিজেদের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করতে চান বিএনপি। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন-বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক চাঁন ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন।
এরমধ্যে দলের দুর্দিন থেকে শুরু করে অদ্যবর্ধি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে সরব উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
অপরদিকে আসনটিতে প্রভাব বিস্তার করতে সরব জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি এটা সবাই জানেন। এখানে জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থীকেই সমর্থন করবেন ভোটাররা। দল আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় নেতাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি আশাবাদী।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের পাশে থেকে ব্যাপক সারা পাচ্ছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো; দল যদি যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেয়, তাহলে প্রার্থী হবো।
জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আওয়ামী-বিএনপির ৫৩ বছরের অদল-বদল রাজনীতির পরিবর্তে নতুন ধারার রাজনীতির জন্যই মানুষ জামায়াতকে বেছে নেবে। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতের বিকল্প নেই। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মানুষ ভুল করবে না বলে আশা করছি।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় থাকা সংগঠনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম জানিয়েছেন, এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। কারণ নির্বাচন জোটগত হবে, নাকি স্বতন্ত্র হবে, তার ওপর নির্ভর করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এখানে অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের এখনও মাঠে দেখা যায়নি।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) :
জেলার সীমান্তবর্তী এই আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এখানে দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। এবারেব প্রেক্ষাপটে আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। আর নতুন করে আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছেন জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলের নেতারা।
ত্রয়োদশ নির্বাচনে এখানে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান মাসুদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা সোলায়মান সেরনিয়াবাত এবং বরিশাল সরকারি বজ্রমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আবু জাফর শিকদার বাদল।
এরমধ্যে অভিজ্ঞ, ত্যাগী ও গঠনমূলক নেতৃত্বের কারণে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজনকে ঘিরে এ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি ফিরেছে। অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন বলেন, প্রচারণা চালাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। দলের মনোনয়নের ব্যাপারেও আমি আশাবাদী।
অপরদিকে প্রত্যন্ত এলাকার এই আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন বরিশাল জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুন নবী। দল আগেই তার নাম চূড়ান্ত করায় বেশ কিছুদিন থেকে চালাচ্ছেন প্রচার। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছেন বলে তার দাবি।
সাধারণ ভোটারদের কেউ কেউ বলেছেন, বড় দুই দল দেখা হয়েছে। তাদের কাছে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি জাতির। এবার নতুন বাংলাদেশে নতুন কাউকে দেখতে চাচ্ছেন তারা। আবার কেউ বলছেন, শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণ না করায় গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন জাতীয়তাবাদী অনেক নেতা। যার প্রমাণ মিলেছে বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে।
সাধারণ ভোটাররা আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগের দমন-পীড়ন সহ্য করে যারা এলাকায় ছিলেন, তাদের যেন দল মূল্যায়ন করে, অন্যথায় ভোট পাওয়া কষ্টকর হবে।
বরিশাল জেলার ছয়টি আসনেই একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকার বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগীয় দলনেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, অন্য দলের সাথে আমাদের তুলনা করে লাভ নেই। তাদের প্রার্থী খুঁজতে হয়, আর আমাদের প্রার্থী বাছাই করতে হয়। ক্লিন ইমেজের যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করে বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটা বড় দল। এই দলে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, আছে প্রতিযোগিতা। গণতান্ত্রিক দলে প্রতিযোগিতা বেশি থাকাটা স্বাভাবিক। আর দেশের জনগণের চাওয়াই বিএনপির চাওয়া। আর সেটা হলো জাতীয় নির্বাচন।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছেন এবার ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের হাতে ধানের শীষ তুলে দেওয়া হবে। তার (তারেক রহমান) কথায় কোন ব্যত্যয় হবেনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন