স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ দুদকসহ একাধিক মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে থাকা চারবারের পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুর রহমান মালেকের ঠিকাদারী কাজ সম্পন্নের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রভাবশালী দুই বিএনপি নেতা। এনিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারিভাবে নির্মানাধীন দুইটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে দায়িত্ব পালনে চরম উদাসিনতার অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মানিক লাল দাস বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে বিষয়টি যেহেতু শুনেছি অবশ্যই তদন্ত করে দেখবো। তদন্তে কোনধরনের অনিয়মের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনাটি বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলা সদর ও কাউখালী উপজেলার। মডেল মসজিদ নির্মানের ঠিকাদার মেসার্স রাজ এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্তাধিকারী হাবিবুর রহমান মালেক জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর পৌরসভার চার বারের মেয়র ছিলেন। এছাড়াও তিনি (মালেক) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালের মেজো ভাই। গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর মসজিদ দুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। কাজ দুটি সম্পন্নের দায়িত্ব পেয়েছে মের্সাস ইলেক্ট্রো গ্লোব, মেসার্স খান বিল্ডার্স ও রাজ এন্ড ব্রাদার্স নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিয়মানুযায়ী কাজ পরিদর্শনের জন্য সেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রকৌশলী থাকার কথা। কিন্তু সেখানে তদারকির জন্য কোনো প্রকৌশলী না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিজেদের ইচ্ছেমত অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করছেন।
সরেজমিনে নির্মানাধীন দুটি মসজিদ এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মসজিদ নির্মাণের শুরুতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮০ ফুট পাইল কাস্টিন করে স্থাপন করার নিয়ম থাকলেও সেখানে ৫৫ ফুটের পাইল কাস্টিন করেই কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ঢালাইয়ের জন্য নিম্নমানের রড ও ইট বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঠিকাদারের কথায় তারা এমন কাজ করেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি প্রকল্পের মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের কোনো প্রকার সাইনবোর্ড না ঝুলিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে ভিতরে বসে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করছেন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে মসজিদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া সত্বেও কিছুদিন পরে আত্মগোপনে থাকা ঠিকাদার সাবেক পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক স্থানীয় দুইজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতাকে ম্যানেজ করে তাদের মাধ্যমে পুনরায় কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে জানতে মেসার্স রাজ এন্ড ব্রাদার্সের ঠিকাদার আতœগোপনে থাকা সাবেক পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্সের প্রোপাইটর নাসির খান বলেন, আমরা তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মসজিদ দুটি নির্মাণের কাজ পেয়েছি। এরমধ্যে একজন ছিলেন পিরোজপুরের তৎকালীন পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক। তখন তার প্রভাবে ইলেক্ট্রো গ্লোব ও মেসার্স খান বিল্ডার্স কাজ না করে সাবেক পৌর মেয়রের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাজ এন্ড ব্রাদার্সকে কাজ করার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছি। এরইমধ্যে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তৎকালীন পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক কাজ দুইটি বিএনপি নেতাদের তদারকিতে দিয়ে আত্মগোপন করেন। এখন তারা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে যদি কাজ করে তার দায়ভার আমরা নেবো না। কাজ খারাপ হলে সেটা গণপূর্ত অধিদপ্তরের দেখা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অনিরুদ্ধ মন্ডলের কাছে নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, কাজের ক্রুটি ধরার আপনারা কে? এটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দেখবে।
পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খাইরুজ্জামান মোবাইল ফোনে বলেন, প্রতিটি প্রকল্প দেখভালের জন্য একজন করে ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা, হয়তো আপনারা তাদের পাননি। পরে কাউখালী উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে কোনো ইঞ্জিনিয়ার না থাকার বিষয়টি তাকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।