• ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশাল শিল্পকলার দুর্নীতিবাজ অসিতের শাস্তিমূলক বদলি

দখিনের বার্তা
প্রকাশিত অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ২৩:৫৯ অপরাহ্ণ
বরিশাল শিল্পকলার দুর্নীতিবাজ অসিতের শাস্তিমূলক বদলি
সংবাদটি শেয়ার করুন....

শিল্পকলার দু

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির বিতর্কিত কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাস গুপ্তকে আকস্মিক বদলি করা হয়েছে। সোমবার রাতে তার কুড়িগ্রামে বদলি সংক্রান্ত একটি খবর ছড়িয়ে পড়লে এই কীর্তনখোলা তীর জনপদের শিল্পসমাজের মধ্যে স্বস্তি লক্ষ্য করা যায়। এবং এই কর্মকর্তার বদলি নিয়ে শিল্পসমাজের ব্যক্তি-বিশেষকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে করতে দেখা গেছে, যা হাফ ছেড়ে বাঁচার ন্যায়।

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর অসিত বরণের বিরুদ্ধে কর্মস্থল বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পরে এই কর্মকর্তা বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে যোগদান করার পরপরই বিভন্ন সমালোচিত কাজের মাধ্যমে নিজেকে বিতর্কের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান।

সম্ভবত বিতর্কিত কর্মকান্ডের মধ্যে তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল গত ৩০ জুন জেলা সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া। এতে শিল্পকলা একাডেমিতে দায়িত্বরত প্রশিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হন। তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কালচারাল কর্মকর্তা হাসানুর রশীদ শিল্পকলায় নিযুক্ত ১২ জন প্রশিক্ষকের ২০২৪-২৫ সালের চুক্তিনামা নবায়ন করে যেতে পারেননি। তবে প্রশিক্ষকরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। নবায়নের জন্য কয়েক দফায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে গেছেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সুরাহা হয়নি। তাদের অভিযোগ, অসিত বরণ দাশগুপ্ত প্রশিক্ষক নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতি করছেন।

অসিত বরণ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করে লিখিত অভিযোগপত্র দেওয়াও হয়েছিল। গত ১ জুলাই বরিশালের গণমাধ্যমকর্মী মুহম্মদ ইমন খন্দকার হৃদয় অভিযোগপত্রটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ওয়ারেছ হোসেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এবং দুদকের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. এইচএম আক্তারুজ্জামানের বরাবর পেশ করেন।

অভিযোগপত্রে মুহম্মদ ইমন খন্দকার উল্লেখ করেন, অসিত বরণ দাশগুপ্ত ২০১৩ সালে কালচারাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে সিলেট, হবিগঞ্জ ও বর্তমানে বরিশালে দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৬ সালে সিলেটে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা স্মারকলিপি দেন। ২০২৪ সালে সিলেটে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়। ২০২৫ সালে তাকে বরিশালে বদলি করা হয়। বরিশালে যোগদানের পর থেকেই সরকারি রেস্ট হাউজে পরিবারসহ মাসের পর মাস অবৈধভাবে বসবাস করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। একইসঙ্গে হলরুম ভাড়ার টাকা গোপন রেখে তা ব্যক্তিগতভাবে এবং স্থানীয় ও সাধারণ ফান্ডের ২৯ লাখ টাকার একটি বড় অংশ তুলে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া জনসাধারণের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে পুরো প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

এই অভিযোগটি তদন্তে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) উপমা ফারিসাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৮ আগস্ট তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন।

শিল্পকলার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন তুলে ধরার পরপরই তাকে বরিশাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে তার এই বদলিকে এক ধরনের শাস্তিমূলকও বলা যায়।

সূত্রটি জানিয়েছে, রোববার এক আদেশে সারা দেশের অন্তত ১৯ জেলার কালচারাল অফিসারকে বদলি করে শিল্পকলা এডাডেমি। এবং আদেশে বলা হয় স্ব-স্ব কর্মকর্তাগণ আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করবেন। যদি এর ব্যত্তয় ঘটে তাহলে ওইদিনই কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।

বদলির বিষয়টি সম্পর্কে জানতে অসিত বরণকে ফোন করা হলে তিনি এনিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বরং সংবাদ করার আগে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দেন।

তবে তার বদলির আদেশটি সঠিক বলে  বরিশাল জেলা প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। এবং জানিয়েছে, অসিত বরণকে কুড়িগ্রামে পাঠানোর পাশাপাশি বরিশালে নতুন কালচারাল কর্মকর্তা হিসেবে পটুয়াখালীর তানবীর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বরিশালের শিল্পসমাজ অসিত বরণের বদলির খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে একাধিক ব্যক্তি জানান, স্বৈরাচারের দোসর অসিত বরণ বরিশালে যোগদান করে শিল্পকলাকে নিজের সম্পত্তি মনে করেছিলেন। বিএনপি ঘরনার ২/৩ জন রাজনৈতিকের সাথে সম্পর্ক রাখতে বা তাদের খুশি করতে গিয়ে তিনি একাধিক বিতর্কিত কর্মকান্ড করেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচার করে শিল্পীদের অর্থ আত্মসাৎ করার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত এই অভিযোগটি সংবাদপত্রে মোটা দাগে শিরোনাম হয় এবং এতে শিল্পীসমাজ নড়েচড়ে বসে