॥ বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ মাদক কারবারীর বাড়ি জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদীতে। এ জন্য গৌরনদীকে বলা হয় মাদকের স্বর্গ রাজ্য। মাদকের স্বর্গ রাজ্য উপাধী পেলেও দীর্ঘ এক বছরেও অধিক সময় ধরে এ উপজেলায় বড় ধরনের কোন মাদক বিরোধী অভিযান হয়নি। যে কারনে বীরদর্পে মাদক বিক্রি করে যাচ্ছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে মাদকের ভয়াল থাবা শহর ছাড়িয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছে গেছে। ফলে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের মতো মাদক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খাঞ্জাপুর, বার্থী, চাঁদশী, মাহিলাড়া, বাটাজোর, নলচিড়া ও সরিকল ইউনিয়নের বিভিন্ন মাদক স্পটে বিক্রেতারা হরদমে মাদক বিক্রি করে যাচ্ছে। পৌর এলাকার টরকী বাসষ্ট্যান্ড, গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড, বন্দর, গয়নাঘাটা, কসবা, কাসেমাবাদ, হরিসেনা, হাইমার্কেট, উত্তর বিজয়পুর, দক্ষিণ বিজয়পুর, টিকাসার, দিয়াশুর এলাকার স্পটগুলোতেও মাদক বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে গৌরনদীর সীমান্তবর্তী সরিকল ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন থেকে চিহ্নিত মাদক কারবারিরা সরিকলে মাদক বিক্রি করে আসছে। এছাড়াও উপজেলার পূর্ব মাহিলাড়া, দক্ষিণ মাহিলাড়া ও বার্থী ইউনিয়নের গাইনের পাড় এলাকায় হরদমে মাদক বিক্রির সন্ধান মিলেছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, মাদকের বড় ধরনের ডিলাররা ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে খুচরা বিক্রেতাদের দিয়ে মাদক বিক্রি করে যাচ্ছে। আবার অনেক ডিলার এলাকায় না থেকেও তরুন-যুবকদের মাদক বিক্রির কাজে নিয়োজিত করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক বিক্রি করে অল্পতে ভাগ্য বদলের আশায় এসব তরুন-যুবকরা অন্ধকারের চোরাগলিতে পা বাড়িয়ে নিজেরা যেমন বিপদগামী হচ্ছে তেমনি পরিবারগুলোকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। আর এ কারণে ইতোমধ্যে বরিশালে মাদক সেবী ছেলের হাতে বাবা ও মাদক সেবনের টাকা না দেয়ায় ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাবা ও মায়ের হাতে মাদকসেবী ছেলে খুনের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে মাদক ছেড়ে আলোর পথে আসা একাধিক ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দীর্ঘ বছর ধরে এলাকায় মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ মাদক কারবারীর খেতাব পেয়েছে গৌরনদীর কটকস্থল গ্রামের মজিবর রহমান মাঝির ছেলে হিরা মাঝি। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে একাধিকবার সে কারাভোগ করলেও মাদক ব্যবসা থেকে ফিরে না এসে তিনি আরো বেপরোয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে-হিরা মাঝির মাদকের টাকার ভাগ পাচ্ছেন এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয় প্রভাবশালী থেকে শুরু করে কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্যরা। যেকারণে ক্রমেই সে (হিরা মাঝি) বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেও সাব ডিলারের মাধ্যমে পূর্বের চেয়ে হিরা মাঝির মাদক ব্যবসা আরো জমজমাট হয়ে উঠেছে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, হিরা মাঝির অধীনে শতাধিক সাব ডিলার এলাকায় ইয়াবা ও ফেনসিডিলি সাপ্লাই দিচ্ছে। এসব সাব ডিলারের অধীনে রয়েছে শত শত খুচরা বিক্রেতা। যারা ঘুরে ঘুরে কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে মাদক সেবীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে মরন নেশা ইয়াবা ও ফেনসিডিল। আর এসব মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যুব ও কিশোর সমাজ। অপর একটি সূত্রের দাবি বর্তমানে গৌরনদীতে হিরা মাঝির চেয়েও আরও অনেক বড় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা প্রশাসনের ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে।
অতিসম্প্রতি বরিশালের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে-যেখানে বর্তমানে অর্ধশতাধিক মাদক সেবী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যারমধ্যে ১৬ থেকে ৬০ বছরেরও মাদকসেবী রয়েছেন। যারা বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীদের মাধ্যমে বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হয়ে পরেছিলেন। চিকিৎসাধীন অধিকাংশ মাদকসেবীরা বরিশালের বিভিন্ন গ্রামের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকসেবীদের একাধিক স্বজনরা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন-অর্থাভাবে মাদক ছেড়ে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এজন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারমিন সুলতানা রাখী জনকণ্ঠকে বলেন, মাদক বিরোধী অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। হয়তো নানা কারনে মাদক বিরোধী অভিযান একটু ঢিলেঢালা হতে পারে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে পুলিশের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন-মাদকের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অভিযান পরিচালনার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোন মাদক ব্যবসায়ীর সাথে থানা পুলিশের কোনধরনের সম্পৃক্তরা প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।