• ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ উত্তপ্ত বরিশালের রাজপথ

দখিনের বার্তা
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ১৫:৪২ অপরাহ্ণ
হঠাৎ উত্তপ্ত বরিশালের রাজপথ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবের পর হঠাত করে কয়েকটি ইস্যু নিয়ে বরিশালের রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে-ববিতে ২২ দফা দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের অনড় কর্মসূচি, শেবামেকে কমপ্লিট শাটডাউনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে সরকারি প্রজ্ঞাপনে অগ্নিসংযোগ, কুয়েটে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের মধ্যে উত্তেজনা, ভাড়া নিয়ে দ্বন্ধে সহপাঠীদের মারধরের প্রতিবাদে লঞ্চঘাটে আইএইচটির শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনাসহ বেশ কিছু ইস্যুতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিদিনই চলছে মিছিল ও সমাবেশ।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সমাবেশের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সভা ও সমাবেশের মাধ্যমে তাদের শক্তির জানান দিচ্ছেন।

অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। সবমিলিয়ে ক্রমেই উত্যপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশালের রাজপথ।

সূত্রমতে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করতে চেয়েছেন। আর সেই মিছিলে যোগ দিতে অপর একটি কলেজের বহিরাগত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসলে ছাত্রদলের অনুসারীরা তাতে ক্ষুব্ধ হন। এনিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সদস্য সচিব এসএম ওয়াহিদুর রহমান বলেন, কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে একটি কর্মসূচি ছিল। সেখানে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। সেখানে যারা হামলা চালিয়েছে তারা নিজেদের ছাত্রদলের কর্মী পরিচয় দিয়েছিলেন।

বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রদলের মহানগরের নেতারা ও আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঘটনাস্থলে আসি। পরে আলোচনার মধ্যদিয়ে ভুল বোঝাবুঝির নিস্ফতি করা হয়েছে।

মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম রনি তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।


মশাল মিছিল :

কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ১৮ ফেব্রæয়ারি দিবাগত রাত ১১টার দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে (শেবামেক) মশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। একইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

প্রজ্ঞাপনে অগ্নিসংযোগ :

শিক্ষক সংকট নিরসন ইস্যুতে গত চারদিন ধরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে (শেবামেক) শিক্ষার্থীদের চলমান কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক সংকট নিরসন ইস্যুর মতো যৌক্তিক দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ডেন্টাল অনুষদের প্রফেশনাল পরীক্ষা ও ২৮ ফেব্রæয়ারি ওই অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হলে এর দায়ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ অধ্যক্ষ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ফলে কলেজের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেনন, কলেজে মোট ৩৩৪ জন শিক্ষকের পদের বিপরীতে ১৬১টি পদে শিক্ষক রয়েছে। বাকী ১৭৩টি পদ শূন্য। ফলে তাদের শিক্ষাদানে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক সংকট নিরসনের দাবীতে শিক্ষার্থীদের চলমান কমপ্লিট শাটডাউনের মধ্যে ১৯ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ছয়জন চিকিৎসককে কলেজে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

শিক্ষার্থীদের দাবী, অভিজ্ঞ শিক্ষক থাকতেও অনভিজ্ঞ কয়েকজন চিকিৎসককে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রতি প্রহসন। তাই তারা প্রজ্ঞাপন না মেনে তাতে অগ্নিসংযোগ করেছে।

লঞ্চঘাটে বিক্ষোভ :

মেয়ে সহপাঠীদের মারধরের প্রতিবাদে বরিশাল নদী বন্দরে ১৯ ফেব্রæয়ারি বিকেলে বিক্ষোভ করেছেন বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভের মুখে স্টাফরা ঘাটে এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চ বেঁধে রেখে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে রাতে নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌ পুলিশ ও আইএইচটি অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গত ১৬ ফেব্রæয়ারি তারা আটজন শিক্ষার্থী বরিশাল থেকে এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চে ঢাকায় আসেন। ওইসময় লঞ্চের স্টাফরা তাদের চুক্তির চেয়ে চারটি টিকিট বেশি দেয়। পরেরদিন লঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পর শুভরাজ-৯ লঞ্চের স্টাফরা জানতে পারেন। এরপর তারা সেই চার টিকিটের টাকা চেয়ে সারাদিন অনবরত ফোন দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদর্শন করা হয়।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, কাজ শেষে তারা সবাই বরিশালে আসার জন্য ১৭ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাটে এসে এমভি মানামী লঞ্চে ওঠার পর শুভরাজ-৯ লঞ্চের একাধিক স্টাফ তাদের আটজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়।

এসময় মেয়ে সহপাঠী বৈশাখী, পূজাসহ ৪/৫ জন লঞ্চ স্টাফদের হামলার শিকার হয়। এ ঘটনার জেরধরে সহপাঠীরা বরিশাল নদী বন্দরে নোঙর করা এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চে আসি। একপর্যায়ে কৌশলে লঞ্চ থেকে সব স্টাফ পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ছাত্ররা ঘাটের পল্টুনে লঞ্চটির বিভিন্নতলায় অবস্থান নিয়ে হামলার বিচারের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। বরিশাল সদর নৌ-পুলিশের ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, ঘটনাটি ঢাকার সদরঘাটে হওয়ায় আইনি ব্যবস্থা সেখানে নিতে হবে।


২২ দফা দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা :

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাব ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানিয়ে ২২ দফা দাবি আদায়ে অনড় কর্মসূচি করেছেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস রুম ও আবাসিক হল সংকট নিরসনে বাজেট আনতে ব্যর্থ হওয়া, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের মিথ্যা মামলা দেওয়া, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার প্রতিবাদসহ পূর্বে ঘোষণা করা ২২ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

তাদের দাবি পূরন না হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় করবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারন করা হয়েছে।

অপরদিকে বুধবার রাতে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিনের নির্দেশে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করলে তারা সড়ক অবরোধসহ কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকবেন।

এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ববি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উপাচার্যের গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। ওই ঘটনায় ববি উপাচার্যের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

 

ছাত্রদলের বিক্ষোভ :

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য ও হরতালের প্রতিবাদে নগরীতে গত ১৮ ফেব্রæয়ারি দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রদলের নেতারা বলেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ তাদের কর্মকান্ডে লজ্জিত না হয়ে, ক্ষমা না চেয়ে উল্টো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। হরতাল ডেকে ফের নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইছে। এসবের দায় একমাত্র শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে।


মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা :

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার লিফলেট ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল-১ আসন থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান।

গত এক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন তিনি গৌরনদী ও আগৈলাঝাড়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় মতবিনিময় সভা অব্যাহত রেখেছেন।

তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সরিকল বন্দরে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান বলেছেন, দেশের মানুষ সংস্কার বোঝে না, তারা শান্তি, সুশাসন ও নির্বাচন চায়। দেশে যতো দ্রæত জাতীয় নির্বাচন হবে, ততো দ্রæত দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

তিনি আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করার কোন বিকল্প নেই।

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে আবদুস সোবহান বলেন, নীল নদের পানি যেমন নীল নয়, তেমনি জামায়াতে ইসলামী কোন ইসলামী দল নয়। তাই তাদের নিয়ে যদি কারো ক্ষমতায় থাকার খায়েশ থাকে, তাহলে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। জনগণ আপনাদের রায় দিলে আমরা সেটা মেনে নিবো।

অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সবমিলিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবের পর হঠাৎ করে বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ফের গরম হয়ে উঠেছে বরিশালের রাজপথ।