বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাকাশুরা বাজারে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের একজন এজেন্ট কর্মকর্তা নাইম গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন। এই ঘটনায় সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা এখন তাদের আমানত ফেরতের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।গ্রাহকের টাকায় নাইম নিজে মাল্টিপারপাস খুলে ব্যবসা করার অভিযোগ আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাকাশুরা বাজারের দীর্ঘদিনের পরিচিত ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট কর্মকর্তা মোঃ নাইম এলাকার সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে ব্যাংক লেনদেনের কাজ করে আসছিলেন। গ্রামের সহজ—সরল মানুষ তার মাধ্যমে টাকা জমা রাখতেন, ডিপিএস করতেন,গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল দিতেন এবং বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতেন। অভিযোগ উঠেছে, গত একমাস ধরে নাইম বাজারে দেখা যাচ্ছে না এবং তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এরপরই গ্রাহকদের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে।তারা বাজারে এসে জানতে পারে নাইম টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে।সেখানে থাকা বিক্ষুব্দ জনতা ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অভিযোগ, এজেন্ট নাইম ভুয়া রশিদ এবং ভুল হিসাব,গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে ভূয়া সিল দিয়ে টাকা জমা না দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন। অনেক গ্রাহক তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের পুরোটাই হারিয়েছেন। এদের মধ্যে দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী কর্মীরাও রয়েছেন, যাদের কাছে এই টাকা ছিল ভবিষ্যৎ জীবনের একমাত্র ভরসা।
ভুক্তভোগী একজন গ্রাহক জানান, “আমি তার কাছে ৫০ হাজার টাকা ডিপিএস করেছিলাম। আজ জানতে পারছি আমার নামে কোনো ডিপিএস খোলা হয়নি। আমার সব টাকা শেষ হয়ে গেছে।” আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার মেয়ের বিয়ের জন্য এক লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। এখন সব শেষ। আমরা কোথায় যাব, কার কাছে বিচার চাইব?”আবার অনেকে এসে অভিযোগ করে দুই মাস আগে এখানে বিদ্যুৎ বিল দিয়েছি কিন্ত বিদ্যুৎ অফিসে টাকা জমা না দিয়ে টাকা আত্নসাত করেছে।অভিযোগ উঠেছে নাইম গ্রাহকের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজে মাল্টিপারপাস কোম্পানি খুলে সেখানে ব্যবসা করেছে।
উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নাইম বলেন তাদের টাকা অল্প সময়ের ভিতর ফেরত দিয়ে দিব বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেয়।
এই ঘটনায় ডাচ্ বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ সাফাই গাইলেন নাইমের পক্ষে সাংবাদিকের জেরার মুখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন। তবে, ভুক্তভোগী গ্রাহকরা দ্রুত অভিযুক্ত এজেন্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাদের হারানো টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উক্ত বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল নিশাত বলেন আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে এবং ব্যাংক এজেন্ট ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও তদারকির প্রয়োজনীয়তা সামনে এনেছে।
বরিশালে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট কর্মকর্তা কর্তৃক কোটি টাকা আত্মসাৎ: গ্রাহকরা দিশেহারা