নানা বিতর্ক, ‘ওয়ারেন্ট বিক্রি’ ও ‘মামলা বাণিজ্য’-সহ অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের চাঞ্চল্যকর অভিযোগের মুখে অবশেষে বদলি হলেন বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান। তাকে এয়ারপোর্ট থানায় বদলি করা হয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন এয়ারপোর্ট থানার সাবেক ওসি মোঃ আল মামুন-উল ইসলাম।
ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের (আ’লীগ) নেতা-কর্মী ও আসামিদের সুবিধা দিতে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
ওসি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ওয়ারেন্ট বিক্রি ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসামিদের অজ্ঞাত অথবা সমর্থক দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর। অভিযোগ মতে, তিনি কোতয়ালী থানায় যোগদানের পর থেকেই ‘মামলা বাণিজ্য’ শুরু করেন।
ওসি কৌশলে তার মনোনীত দু-একজনকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (‘আয়ু’) বানিয়ে তাদের মাধ্যমে ওয়ারেন্ট বাণিজ্য পরিচালনা করতেন। থানার বকসি জহিরের মাধ্যমে মামলার দায়িত্ব ও আসামি ধরার ওয়ারেন্ট বিক্রি করা হতো বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এসআই ও এএসআই অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনৈতিক মামলার আসামিদের আটক না করে ওসি তার ঘনিষ্ঠ এসআইদের মাধ্যমে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা নিয়ে তাদের আদালত থেকে জামিন নেওয়ার জন্য বলা হতো।
ওসি মিজানুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিনি রাজনৈতিক মামলার শীর্ষ পদ-পদবিতে থাকা আ’লীগ নেতাদের অজ্ঞাত অথবা ‘আ’লীগের সমর্থক’ দেখিয়ে আদালতে পাঠাতেন। এর ফলে অভিযুক্তরা জামিন পেতে সুবিধা পেতেন।
সম্প্রতি বরিশালে আ’লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা আটক হওয়ার পরও সহজে জামিন পাওয়ায় এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিএনপির একাধিক নেতা এবং আদালতের সরকারি পাবলিক প্রসিকিউটরও নিশ্চিত করেছেন, টাকার বিনিময়ে ‘ধারার মারপ্যাঁচে’ অভিযুক্তরা আদালত থেকে সহজে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন।
থানার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওসি মিজানুর তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ব্যবহার করতেন:
কনস্টেবল বকসি জহিরের মাধ্যমেই ওয়ারেন্ট বাণিজ্য ও থানার বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হতো বলে অভিযোগ।এসআই মানিক চন্দ্র সাহা ও এএসআই ইসমাইল-১ অভিযান ডিউটি পরিচালনা করতেন। সূত্রমতে, মূলত এএসআই ইসমাইল-১ এর হাতেই পুরো থানার নিয়ন্ত্রণ ছিল। এই পুলিশ সদস্যরা দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে কোতয়ালী থানায় কর্মরত।
এসআই মাজেদ, এএসআই পিনাক ও এএসআই বদিউজ্জামানও ওসির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে থানার আর্থিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ।অভিযোগ আছে, থানার কার্যক্রম পরিচালনায় বিপুল খরচের চাপ থাকায় এই অনিয়মগুলো সংঘটিত হতো এবং এই টাকার ভাগ উপরস্থ পর্যায়েও পৌঁছে যেত।
৫ আগস্টের পর এক যুগ পর বদলি হওয়া তিন এএসআইকে পুনরায় কোতয়ালী থানায় ফিরিয়ে আনার অভিযোগও উঠেছে ওসি মিজানুরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ মতে, ফ্যাসিবাদী আ’লীগ সরকারের আমলে এক মন্ত্রীর সুপারিশে চাকুরি পাওয়া এই পুরাতন এএসআইদের তদবির করে আনা হয়েছিল আসামিদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য।
ওসি মিজানুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নগরীতে মামলার আসামিদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোয় কর্ণপাত না করে নিজের ফেসবুক পেজে ‘মানবিক পুলিশ’ সাজার জন্য কন্টেন্ট বানাতে ব্যস্ত থাকতেন। তার বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়েও জনমনে প্রশ্ন ছিল। সেবাপ্রত্যাশীরা তাকে থানায় সহজে পেতেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।রাজনৈতিক মামলার আসামীদের তালিকা এমিগ্রেশ্ন পুলিশকে না দিয়ে আসামীদের দেশ থেকে সহজে বের হয়ে ঘুরে আসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার মত গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, ইন্সপেক্টর মিজানুর ও গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর ছগির হোসেনের বিরুদ্ধে ডেভিল হান্টের অভিযানের আর্থিক বাণিজ্য নিয়েও অভিযোগ ছিল। এমনকি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করার পরও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, যা পরে জানাজানি হলে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিতর্কিত ওসির এই বদলিকে কেন্দ্র করে এখন নতুন ওসির নেতৃত্বে থানায় স্বাভাবিক ও স্বচ্ছ কার্যক্রম ফিরে আসবে বলে আশা করছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ।তবে এত কিছু অনিয়ম অভিযোগের পরও কি সাধারণ বদলীতে সীমাবদ্ধ থাকবে না কি শাস্তি মূলক আইনি ব্যবস্থা নিবে উপরস্থ কর্মকর্তা এমনটা বলছে বরিশালবাসী।