বরিশালসহ সারাদেশ জুড়ে বইছে তীব্র শীতের হাওয়া। আর এই শীতের কুয়াশার মধ্যে বাঁশের টুকরি আর কোদাল হাতে মানুষগুলো ভিড় জমাচ্ছেন ‘মানুষ বেচা-কেনার হাটে’। তবে শীতের কারণে চরম মন্দা ভাব যাচ্ছে এ হাটে।
কনকনে শীত আর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া সকালে রাস্তায় তেমন কোন মানুষের দেখা মিলছেনা। ঠিক সেই সময় শীতে কাঁপতে কাঁপতে আয়ের সন্ধানে নগরীর রুপাতলী সড়ক, মরগখোলার পুল, চকের পুল, কাশিপুর বাজার, কালিজিরা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে একদল নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন কাজ পাওয়ার অপেক্ষায়। তাদের কারও হাতে কাস্তে, কোদাল, বেলচা, বাঁশের ঝুড়ি, রশি, পানি রাখার ড্রাম, হাতুরি ও কাঠ দিয়ে বানানো ভারি জিনিস টানার সরঞ্জাম।
মরগখোলার পুল এলাকার মানুষ কেনা-বেচার হাটে দাঁড়িয়ে থাকা সুফিয়া বেগম নামের এক নারী শ্রমিক বলেন, স্বামী মারা গেছে সাত বছর পূর্বে। সংসারে আয় করা মতো কেউ নেই। আমিই হলাম ছেলে-মেয়েদের একমাত্র ভরসা। একদিন কাজ না করলে ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে থাকে। বড় মেয়ে কলেজে পড়ে। আর ছোট ছেলে এলাকার একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। তাদের পড়াশুনার জন্য প্রতিমাসে ছয় হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। তাই এই শীতের মধ্যেও কাজের সন্ধানে প্রতিদিন আমাকে এখানে আসতে হয়। সুফিয়া বলেন, গরীবের কষ্টের শেষ নেই। বর্তমানে বাজারে সব জিনিসের দাম দ্বিগুন। কিন্তু আয় আগের মতোই।
সাগরদী ব্রিজের ঢালে দাঁড়িয়ে থাকা হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সংসারে আমার এক মেয়ে আর স্ত্রী ছাড়া কেউ নেই। তাই খেটে খেতে হচ্ছে। একদিন কাজ না হলে বাড়ির সবাইকে অর্ধাহারে অনাহারে থাকতে হয়। শীত, বৃষ্টি আর গরম; কাজ না করলে ভাত দিবে কে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মাস ধরে শ্রমিকদের চাহিদা একেবারে নেই বললেই চলে। সরকার পরিবর্তনের পর সিটি করপোরেশন বাড়ি-ঘর তৈরির অনুমতি দিচ্ছে না, যেকারণে আমাদেরও চাহিদা নেই।
সূত্রমতে, বরিশালে শ্রমিকের দৈনিক পারিশ্রমিক সাতশ থেকে এখন পাঁচশ টাকায় নেমে এসেছে। তবুও কাজ পাছেন না অধিকাংশ শ্রমিক। কাজ না পেয়ে তাদের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই কম টাকাতেও কাজে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ শ্রমিক বেসরকারি আশা, ব্রাক, গ্রামীণ শক্তি, পল্লীসহ একাধিক এনজিওর কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন। কাজ থাকুক আর নাই থাকুক সাপ্তাহিক কিস্তিতে কোন মাফ নেই। কিস্তি না দিতে পারলে সহ্য করতে হয় খারাপ আচরণ। বাধ্য হয়ে অনেক শ্রমিককে বাড়ি ঘরের মালামাল বিক্রি করেও কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বরিশালের কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্লান অনুমোদনে জটিলতা ও হয়রানি চলছে।
এসব জটিলতায় হাজার হাজার নির্মাণ শ্রমিক, জমির মালিক, ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্টসহ নানা পেশার মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
জেলার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বরিশালে প্রচুর ঠান্ডা পড়ছে। তারমধ্যেও দিন খেটে খাওয়া মানুষগুলো আয়ের উদ্দ্যেশে প্রচন্ড ঠান্ডা ও কুয়াশায় কাজের খোঁজে বের হচ্ছেন। তারা কাজ না করলে না খেয়ে থাকবে তার পরিবারের সদস্যরা। সরকারের পক্ষ থেকে এসব শ্রমিকদের দিকে নজর নেওয়া খুবই প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।