মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে সদ্য সমাপ্ত ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় একাধিকবার হামলার স্বীকার হয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় কঠোর অভিযান পরিচালনা করে সফলতা অর্জন করে বরিশাল বিভাগের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মেঘনা নদীর তীরবর্তী হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম।
ইলিশের অভয়ারণ্য মেঘনা নদীতে এবারই সর্বপ্রথম তিনি (আলম) চারটি ড্রোন উড়িয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে মাছ ধরার জন্য নামা অসাধু জেলেদের অবস্থান নিশ্চিত করে অভিযান পরিচালনা এবং জেলেদের হামলা ঠেকাতে জলকামান ব্যবহার করা হয়। যেকারণে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে এবার সর্বাধিক জেলেকে আটক, মামলা দায়ের, বিপুল পরিমান অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে বিনষ্ট এবং ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে রেকর্ড পরিমান জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এবারই সর্বপ্রথম নিষেধাজ্ঞার সময় ওই সিনিয়র মৎস্য অফিসারের কারণে নিজেদের পকেট ভাড়ি করতে পারেননি স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। এরইমধ্যে আসছে নভেম্বর মাস থেকে শুরু হবে ঝাটকা নিধনের উপর সরকারের আট মাসের নিষেধাজ্ঞা। তাই তাকে (সিনিয়র মৎস্য অফিসার) হিজলা উপজেলা থেকে সরাতে এক অভিনব পন্থা বেঁছে নিলেও ষড়যন্ত্রের মূল রহস্য ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে হিজলা উপজেলাসহ পুরো বরিশালজুড়ে।
কতিপয় অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ী ও তাদের সেল্টারদাতা স্থানীয় সুবিধাভোগী কয়েকজন ব্যক্তির ষড়যন্ত্রের অংশহিসেবে নিষেধাজ্ঞার সময় মেঘনায় মাছ ধরার সময় আটকের পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত এক জেলের স্ত্রীর মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন নিয়ে অপপ্রচার শুরু করা হলেও প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসায় চরম বেকায়দায় পরেছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
সূত্রমতে, সদ্য সমাপ্ত ২২ দিনের (৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর) মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমের মধ্যে গত ১১ অক্টোবর বিকেলে মেঘনা নদীতে অভিযান পরিচালনার সময় অসাধু জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের হামলায় সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আলমসহ কোস্টগার্ড ও মৎস্য অফিসের কমপক্ষে ১৫ জন সদস্য আহত হন। ওইদিন রাতে অন্যান্য আহতদের সাথে মৎস্য অফিসারকেও উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সূত্রে আরও জানা গেছে-এমন পরিস্থিতিতে ওই একইদিন (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলা মৎস্য অফিসের নিচে বসে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১৬দিনের কারাদন্ডপ্রাপ্ত জেলে খোলনা এলাকার বাসিন্দা রুবেল আহমেদের স্ত্রী রাহিমা বেগমকে দিয়ে মৎস্য অফিসারকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার অপপ্রচার ছড়িয়ে দেয়া হয়।
ওইদিন মেঘনা নদীতে অফিযানে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন-রাহিমা বেগম যে সময়ে ঘুষ লেনদেনের কথা উল্লেখ করেছেন, সেই সময় সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আলম অভিযানে মেঘনায় ছিলেন। পরবর্তীতে ওই অভিযানে হামলার ঘটনায় তিনি (আলম) সহ অন্যান্যরা আহত হয়ে রাতে উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
হিজলা মৎস্য দপ্তরের রেকর্ড ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, গত ১১ অক্টোবর বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রলার জব্দ করা হয়। মানবিক কারণে পরেরদিন (১২ অক্টোবর) সাজাপ্রাপ্ত কয়েকজন অসহায় জেলের ট্রলার তাদের পরিবারের সদস্যদের কান্নাকাটিতে মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই ঘটনাকেই বিকৃত করে অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা রাহিমা বেগমকে দিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে।
স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন-সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আলমের কঠোর অবস্থানের কারণে ঝাটকা ও মা ইলিশ শিকার কমেছে। অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধাচরণই এখন তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন তাকে হিজলা থেকে সরাতে না পারলে ওইসব ব্যবসায়ীরা সামনে ঝাটকা শিকার করতে পারবে না, তাই এক জেলের স্ত্রী রাহিমাকে দিয়ে ঘুষ লেনদেনের মিধ্যে অপপ্রচার করা হচ্ছে। এটি পরিস্কার একটি ষড়যন্ত্র বলেও তারা উল্লেখ করেন।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, উপজেলার আওতাধীন মেঘনা নদীতে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার সর্বকালের শ্রেষ্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে অনেকের নদীতে মাছ শিকার করতে সমস্যা হয়েছে। ফলে সিনিয়র মৎস্য অফিসারের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন-অপপ্রচারকারী নারী যে সময়ের কথা বলেছে, সেই সময়ের সেই স্থানের সিসিটিভির ফুটেজে এধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। বরং ওইসময় মৎস্য অফিসার মেঘনায় অভিযানে ছিলেন এবং সেখানে বসে হামলায় তিনি আহত হয়ে রাতে উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে অপপ্রচারকারী নারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।