• ২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশাল কারাগারে সন্ত্রাসের গডফাদার হারিছের বিলাসি জীবন

দখিনের বার্তা
প্রকাশিত এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১৭:২৯ অপরাহ্ণ
বরিশাল কারাগারে সন্ত্রাসের গডফাদার হারিছের বিলাসি জীবন
সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক: কারাগার সাধারণ বন্ধিদের জন্য কষ্টের জায়গা হলেও বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার এক আওয়ামী লীগ নেতার জন্য আয়েশী জীবনের স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে। এনিয়ে গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সান্টু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে জাকির হোসেন সান্টু লিখেছেন- গৌরনদী উপজেলার সকল রাজনৈতিক সংগঠনের ঘৃণিত চামার হারিছকে কোর্টের গারদে বসার জন্য একটি হাতা ছাড়া চেয়ার দেওয়া হয়েছে। ফোনে দীর্ঘক্ষন কথা বলাসহ প্রতিদিন বাহিরের ভালো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। আজকেও তাকে সকালের নাস্তা বাহির থেকে এনে গারতেই দেওয় হয়। মামলা তারিখে তাকে আদালতে সামনে হাজির করা না হলেও শুধু আরাম আয়েশের জন্য তাকে জেল থেকে কোর্টে আনা হয়। স্টাটাসে তিনি আরো লিখেন- জেলে তাকে (হারিছ) টাকার বিনিময়ে আলাদা ভাবে রাখা হয়। যেখানে অন্যান্য আসামীরা জেলে চরম কষ্টে থাকে, সেখানে তাকে (হারিছ) রাজকীয় অর্ভ্যথরা করার সাধারণ হাজতীরা মনে করে হারিছ এখনো অনেক ক্ষমতার মালিক। তার অনুসারী সকল লোকজন দলবেঁধে তার সাথে কোর্ট গারদে সাক্ষাতের সুযোগে অন্য হাজতীরা ক্ষুব্ধ। ছবিটি তুলতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। আওয়ামী লীগ নেতার এমন স্ট্যাটাসের পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সান্টু জানান, কয়েকদিন আগে একটি মামলার হাজিরা দিতে কোর্টে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি কোর্ট হাজতে চেয়ারে বসে মোবাইলে কথপকথন করছে হারিছ। এছাড়াও জামিনে বের হওয়া ব্যক্তিরারও জানিয়েছেন, কারাগারে বেশ আরাম আয়েশে আছেন হারিছ। এনিয়ে মূলত ফেসবুক স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম। পরে আবার তা মুছে ফেলেছি। তবে লিখেছি তা মিথ্যে নয়।
সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়া একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, জাকির হোসেন সান্টুর ফেসবুক স্ট্যাটাস সঠিক। কারাগারে অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারা কষ্টে থাকলেও সন্ত্রাসী হারিছের বেলায় ভিন্ন। সে কারাগারে বেশ আরাম আয়েশে রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গৌরনদী উপজেলা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র সন্ত্রাসী হারিছুর রহমান। সেসময়ে হামলার শিকার অনেক নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে না পেরে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। যেকারনে তারা মামলা করতে পারেননি। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হামলার শিকার হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত অনেক নেতাকর্মীরা থানায় মামলা দায়ের করেন। বিএনপি নেতাদের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন হারিছ। সূত্রে আরও জানা গেছে, হারিছ শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে ক্ষ্যান্ত হননি। সে তার বাহিনী দিয়ে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ছিলো।
এবিষয়ে গৌরনদী উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান বলেন, জালিম ও ফ্যাসিষ্ট সরকারের কোন লোক যাতে কারাগার তথা অন্যকোথায় সুযোগ-সুবিধা না পায় সেজন্য আমরা অর্ন্তবর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে স্মারকলিপি দেবো।
গৌরনদী কোর্ট জিআরও বেলাল হোসেন জানান, আমার ডিউটিকালীন সময়ে হারিছুর রহমানকে তিনবার এজলাসে আনা হয়েছিলো। সরকারি নিয়মের বাইরে আমি তাকে কোন সুবিধা দেইনি। এরপর আর তাকে আমার এজলাসে আনা হয়নি। হাজতখানায় সে কি সুযোগ নেয় তা আমার জানা নেই।
এব্যাপারে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ভূঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বিষয়টি উদ্ভট কথাবার্তা বলে দাবী করেন এবং জেল সুপারের সঙ্ঘে কথা বলার জন্য বলেন। তবে এবিষয়ে জানতে সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের ০১৭৬৯৯৭০৮১০ নাম্বারে ফোন দেওয়া হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।