• ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেবাচিম হাসপাতালের দালাল ধলা জাফরের বায়োপসি পরীক্ষার নামে চাঞ্চল্যকর প্রতারণার অভিযোগ

দখিনের বার্তা
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫, ২১:০৩ অপরাহ্ণ
শেবাচিম হাসপাতালের দালাল ধলা জাফরের বায়োপসি পরীক্ষার নামে চাঞ্চল্যকর প্রতারণার অভিযোগ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালচক্রের দৌড়াত্বে সাধারণ রোগী ও তাঁদের স্বজনরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জরুরি বিভাগ, আউটডোর থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটারের সামনে—হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে দালালদের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা, ভর্তি কিংবা বিশেষ চিকিৎসকের কাছে “দ্রুত ব্যবস্থা করে দেওয়া”র আশ্বাস দিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

তার ওপর বায়োপসি পরীক্ষার নামে প্রতারণা নতুন করে রোগীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। অভিযোগ উঠেছে—পরীক্ষার নমুনা নিয়ে রিপোর্ট দিতে অযথা কালক্ষেপণ, ভুল বা জাল রিপোর্ট তৈরি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মে সাধারণ রোগীরা মৃত্যুঝুঁকির মুখে পড়ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধলা জাফর নামে এক ব্যক্তি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে অবস্থান করেন। তিনি নিজেকে ঢাকা আনোয়ারা হাসপাতালের ‘বায়োপসি পরীক্ষার এজেন্ট’ পরিচয় দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।

অভিযোগকারীদের তথ্য অনুযায়ী—ঢাকায় পরীক্ষা পাঠানোর কথা বললেও বাস্তবে জাফর নিজেই কম্পিউটারে জাল রিপোর্ট তৈরি করেন।

রোগীদের বলা হয়, পরীক্ষায় এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে; অথচ অনেক ক্ষেত্রে তিনি মাসের পর মাস রিপোর্ট দেন না, ফলে চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দিতে পারেন না। এতে রোগীদের অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে রোগীকে ছুটি দিতে হয়।

বরিশাল সার্জারি ওয়ার্ডের নাসিমা বেগম বলেন—“জাফর ভাই আমার ছেলের অপারেশনের সময় থিয়েটারের সামনে থেকে চিকিৎসকের দেওয়া মাংসের নমুনা নিয়ে যান বায়োপসি করার জন্য। এরপর বেশ কয়েকদিন আমাকে ঘুরিয়ে রাখেন। রিপোর্ট দেননি, বরং ২,৫০০ টাকা নিয়েছেন।”

সরকারি মেডিকেলে যেখানে বায়োপসি পরীক্ষার নির্ধারিত ফি মাত্র ৩০০ টাকা, সেখানে জাফর ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন—যা আরও বেশি হারে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে—হাসপাতাল কর্মচারীর পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন অপারেশন থিয়েটার থেকে বায়োপসির নমুনা সংগ্রহ করেন। এমনকি কিছু ওটি স্টাফ ও দালালচক্রের সদস্যরা কমিশনের বিনিময়ে তাকে সহায়তা করে থাকে।

জাফরের প্রতিষ্ঠানের নাম ইউনিটি মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টার, আর তার চেম্বার পরিচালিত হয় দি বরিশাল মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার নামে।

বায়োপসি প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে ধলা জাফর অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন—“আমি শেরে বাংলা মেডিকেলে কোনো চাকরি করি না।যাদের বায়োপসি পরীক্ষা দরকার তাদের থেকে মাংসপিন্ড সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই।অতিরিক্ত টাকা নিয়ে রিপোর্ট করার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন আপনারা ভালো জানেন কত টাকা লাগে। বায়োপসি রিপোর্ট দিতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।আর আমি এই কাজ করে আমার সংসার চালাই।”তবে তিনি নিজে রিপোর্ট বানিয়ে দেন কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে ‘দেখা করে বলবেন’ বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

এ ঘটনায় রোগী ও তাঁদের স্বজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলেছেন—স্বাস্থ্যসেবা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ক্ষেত্র; সেখানে এ ধরনের প্রতারণা মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপদে ফেলে এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি হুমকি তৈরি করে।অভিযোগ আছে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের দালাল বিরোধী অভিযানে ধলা জাফর বেশ কয়েকবার আটক হয়ে জেল খেটেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দালালচক্র রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। তবে রোগীর চাপ ও হাসপাতালের বিশাল পরিসরের কারণে সবসময় কঠোর নজরদারি সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

জনসাধারণ মনে করেন, হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ব বন্ধে প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি, সিসিটিভি মনিটরিং এবং রোগীসেবা বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। নইলে সেবাপ্রার্থীরা এভাবেই প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হবেন।

 

এ ঘটনায় রোগী ও স্বজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র, এখানে এমন প্রতারণায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যসচেতন মহল মত প্রকাশ করেছে।