• ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশাল কোতয়ালী পুলিশের অভিযানে নাটকীয় মোড়! চিহ্নিত দুই মাদক কারবারি আটক—একজনের রহস্যময় মুক্তি; অর্থ লেনদেনের অভিযোগে উত্তাল জনমত

দখিনের বার্তা
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ২০:২৯ অপরাহ্ণ
বরিশাল কোতয়ালী পুলিশের অভিযানে নাটকীয় মোড়!  চিহ্নিত দুই মাদক কারবারি আটক—একজনের রহস্যময় মুক্তি; অর্থ লেনদেনের অভিযোগে উত্তাল জনমত
সংবাদটি শেয়ার করুন....

**আমানতগঞ্জে পুলিশের অভিযানে নাটকীয় মোড়!

চিহ্নিত দুই মাদক কারবারি আটক—একজনের রহস্যময় মুক্তি; অর্থ লেনদেনের অভিযোগে উত্তাল জনমত**

নিজস্ব প্রতিবেদক //
নগরীর আমানতগঞ্জে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ঘটে যাওয়া নাটকীয় ও প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনাপ্রবাহ এলাকাজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়দের মতে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে আমানতগঞ্জ মুরগির ফার্মের সামনে থেকে দুই কুখ্যাত ইয়াবা ব্যবসায়ী—পলাশপুর ১ নম্বর গলির মধু এবং আমানতগঞ্জের পরিচিত ‘হাতকাটা’ রেদওয়ানকে মাদকসহ আটক করার পর পুলিশের আচরণে যে অসঙ্গতি ও অস্বচ্ছতা দেখা গেছে, তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সততা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

জনসম্মুখে আটক, ফাঁড়িতে নিয়ে রহস্যময় দরকষাকষি:

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জনসম্মুখে আটক করা দুই সন্দেহভাজনের কাছ থেকে ইয়াবার একটি উল্লেখযোগ্য চালান উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু ফাঁড়িতে নেওয়ার পরেই শুরু হয় অভিযোগ-আবৃত গোপন দরকষাকষি। স্থানীয়রা দাবি করেন—এএসআই মনির ও টিএসআই আলমগীর কিছু প্রভাবশালী নেতাকর্মীর সঙ্গে আলোচনায় বসে আটককৃতদের মুক্তির বিনিময়ে মোটা অংকের ‘চাহিদা’ প্রকাশ করেন।

সূত্রদের মতে, প্রথমদিকে পুলিশ প্রকাশ্যে আটক হওয়ায় কাউকেই ছাড়তে অনিচ্ছুক থাকলেও, পরে টিএসআই আলমগীর রহস্যজনকভাবে একজনকে ছাড়া যাবে বলে সম্মতি দেন। পরবর্তীতে ফাঁড়ির ভেতরে দীর্ঘক্ষণ ‘নাটকীয় তৎপরতা’ চলার পর মধুকে চালান দেয়া হলেও, রেদওয়ানকে গোপনে ছেড়ে দেওয়া হয়, যা উপস্থিত সকলে বিস্মিত করে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিপাকে পুলিশ :

ঘটনার খবর পেয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মী ফাঁড়িতে প্রবেশ করে কর্তব্যরত এক এএসআইকে আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন,
“দুইজনকেই দশ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে এবং চালান দেওয়া হয়েছে।”

কিন্তু প্রশ্ন তোলার মুহূর্তেই ফাঁড়ির বাইরে রেদওয়ানকে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সাংবাদিকরা সেই মুহূর্তের ভিডিও দেখালে এএসআই আর কোনো জবাব দিতে পারেননি; বরং তিনি বিব্রত হয়ে পড়েন।

টিএসআই আলমগীরের অদ্ভুত যুক্তি ও ফোন কেটে দেওয়া

ঘটনার সত্যতা জানতে টিএসআই আলমগীরকে ফোনে পাওয়া গেলে তিনি বলেন—
“রেদওয়ানকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে প্রশ্ন করা হলে তিনি হঠাৎই ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন, যা সন্দেহ আরও ঘনীভূত করেছে।

এলাকাবাসীর ক্ষোভ: প্রশ্নের পর প্রশ্ন!

এ ঘটনার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—

“জনসম্মুখে মাদকসহ আটক করা একজন কীভাবে পুলিশের নাকের ডগায় ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে যায়?”

“অভিযানকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে নেওয়া হলো কি না—এমন সন্দেহ আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।”

“যদি পুলিশ ফাঁড়িতেই এমন আপস-বাণিজ্য চলে, তবে মাদক ব্যবসার শিকড় কীভাবে উপড়ানো সম্ভব?”

স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, এই ঘটনা কেবল ব্যক্তি-দুর্নীতি নয়, বরং মাদকবিরোধী অভিযানের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার সমগ্র কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

স্বচ্ছ তদন্তের দাবি এলাকাবাসী, সাংবাদিক মহল এবং অধিকারকর্মীরা দাবি তুলেছেন—
এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে, সংশ্লিষ্ট দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এবং ভবিষ্যতে এমন গোপন বাণিজ্যিক আপোষ যেন আর না ঘটে তা নিশ্চিতে পুলিশের অভ্যন্তরীণ নজরদারি জোরদা হবে। আটক দুজনের মধ্যে রেদোয়ানকে প্রতিবন্ধী হিসেবে আদালতের নির্দেশ ব্যাতিত আপনি ছেড়ে দিতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আমানতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই কুদ্দুস বলেন, সব কি আদালত দেখবে? আমাদের কোন দ্বায়িত্ব নেই? আমি তাকে ছাড়িনি। তাকে ছেড়েছে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি। তার বক্তব্যের রেশ ধরে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কোন ঘুষ বানিজ্য হয়নি। ধৃত বাকি ১ জনের নামে মামলা হয়েছে।অন্য জনকে কেন ছাড়লেন, এমন প্রশ্নে তিনি ফোন কেটে দেন।