• ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে পালানোর সময় প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার ১৫ বছরেও খোঁজ মেলেনি ইউপি চেয়ারম্যানের

দখিনের বার্তা
প্রকাশিত অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১৬:২৯ অপরাহ্ণ
ভারতে পালানোর সময় প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার ১৫ বছরেও খোঁজ মেলেনি ইউপি চেয়ারম্যানের
সংবাদটি শেয়ার করুন....

সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার ১৫ বছরেও সন্ধান মেলেনি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানের। তার পরিবার ও স্বজনরা জানেন না তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কি জুটেছে।
সাবেক ওই ইউপি চেয়ারম্যান জীবিত আছেন, নাকি অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা ডিবি পরিচয়ে অপহরনের পর হত্যা করে তার লাশ গুম করেছে, তা আজও অজানাই রয়ে গেছে। দীর্ঘ বছর পর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানকে অপহরনের পর গুমের অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার প্রভাবশালী সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান ইকবাল গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপর থেকেই নিখোঁজ ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানের সন্ধান পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন তার (হুমায়ুন) পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে নিখোঁজ ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানের ছোট ভাই মঞ্জু খান অভিযোগ করে বলেন-দীর্ঘ বছরেও তার ভাইয়ের নিখোঁজের বিষয়ে রহস্যজনক কারণে কোনো তথ্য দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উল্টো অপহরনের ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধান অভিযুক্ত আসামি হাফিজুর রহমান ইকবাল ও তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা একাধিকবার তার (মঞ্জু) ওপর হামলা চালিয়েছে।
এবার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত (১৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে দিনাজপুরের বিরামপুর থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকার রমনা থানায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ উজিরপুর মডেল থানার দুটি মামলার আসামি ভাইজানখ্যাত হাফিজুর রহমান ইকবাল। তার গ্রেপ্তারের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে নতুন করে নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধান পেতে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোরদাবি জানিয়েছেন হুমায়ুন কবির খানের ভাই ও মামলার বাদি মঞ্জু খান।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী অজ্ঞাত কিছু লোক জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খানকে অপহরন করে নিয়ে যায়। হুমায়ুন কবির খান উজিরপুরের মংশা গ্রামের মৃত মো. মোশারফ হোসেন খানের ছেলে।
হুমায়ুন কবির খানের ছোট ভাই মঞ্জু খান অভিযোগ করে বলেন, তার ভাইয়ের সাথে একই এলাকার হায়দার খানের দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। ঘটনার দুইদিন আগে ঢাকার মাতুয়াইল এলাকায় বসে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যায়। এ ঘটনার দুইদিন পরেই তার ভাই নিখোঁজ হন। তিনি আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে হায়দার খান নাটকীয়ভাবে তার ভাইয়ের (হুমায়ুন) সাথে সমঝোতা করে তার (হায়দার) ঘনিষ্ঠজন তৎকালীন সময়ের ওটরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালের মাধ্যমে হুমায়ুন কবির খানকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করেছে। এমন অভিযোগ তুলে মামলা দায়েরের ফলে হাফিজুর রহমান ইকবাল ও তার সহযোগিরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য একাধিকবার তার (মঞ্জু) ওপর হামলা চালিয়েছে।
মঞ্জু খান অভিযোগ করেন, ইকবাল তার নিজের লাইসেন্সকৃত শর্টগান দিয়ে তার ওপরে গুলি পর্যন্ত চালিয়েছিল। আবেগাপ্লুত হয়ে মঞ্জু খান বলেন, ‘আমার ভাই কী বেঁচে আছেন, নাকি তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। ভাই কী আর কোনদিন ফিরবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবার গ্রেপ্তারকৃত হাফিজুর রহমান ইকবালকে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
মঞ্জু খান আরও বলেন-বিগত পতিত সরকারের সময়ে উজিরপুর উপজেলাবাসীর কাছে হাফিজুর রহমান ইকবাল ছিলেন মুর্তিমান আঙ্কত। তার ভয়ে নির্যাতিতসহ স্থানীয় প্রশাসনের কোন কর্মকর্তারাও মুখ খুলতে সাহস পায়নি। ফলে একের পর এক অপর্কম করেও ধরাছোয়ার বাহিরে ছিলো কুখ্যাত হাফিজুর রহমান ইকবাল। এবার তার (ইকবাল) গ্রেপ্তারের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন উজিরপুরের ভূক্তভোগীরা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সহসভাপতি হাফিজুর রহমান ইকবালের বিরুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত মাছের আড়ত হারতায় প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট ও সোহরাব হোসেন মোল্লা নামের একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার মুন্সীর তালুকগ্রামে অপর এক ব্যক্তিকে হত্যাসহ ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা এবং মাদক বিক্রির একমাত্র গডফাদার হিসেবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যার অধিকাংশ মামলা এখনও উজিরপুর মডেল থানা ও সিআইডি পুলিশের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে হাফিজুর রহমান ইকবাল ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যা সঠিক তদন্ত করলেই মুল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলেও তিনি (মঞ্জু খান) উল্লেখ করেন।